সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড নিয়ে যে আলোচনা হলো

সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড নিয়ে যে আলোচনা হলো

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় পে-কমিশন। বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা। শিক্ষকরা সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন, উচ্চতর গ্রেডের সমস্যা সমাধান, শতভাগ পদোন্নতি, চিকিৎসা-শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধি, নতুন টাইম স্কেল পুনর্বহালসহ নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পে-কমিশন ভবনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে এ বৈঠক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পে-কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান।

বৈঠকের শুরুতে শিক্ষক নেতারা ৭ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পে-কমিশনে পাঠানো সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।

এ বিষয়ে কমিশন চেয়ারম্যান জানান, প্রস্তাবনা কমিশনের কাছে থাকলেও এর বাস্তবায়নের সুযোগ খুবই সীমিত। বিষয়টি পে-কমিশনের নয়, সরকারি সার্ভিস কমিশনের আওতাভুক্ত। কমিশন প্রস্তাবটি নোট আকারে বিবেচনায় নিয়েছে।

এরপর শিক্ষক নেতারা ছয় সদস্যের পরিবারের খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় বিবেচনায় নতুন বেতনকাঠামোর প্রস্তাব পেশ করেন। তারা ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১২টি করার প্রস্তাব দেন এবং সর্বনিম্ন বেসিক বেতন ৩৫ হাজার ও সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় নির্ধারণের দাবি জানান। এতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ গ্রেডের অনুপাত দাঁড়াবে ১:৪।

শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও প্রস্তাব করা হয়—চিকিৎসা ভাতা ১০ হাজার, শিক্ষা ভাতা এক সন্তানের জন্য ৫ হাজার ও দুই সন্তানের জন্য ১০ হাজার, আর বাড়িভাড়া ভাতা এলাকাভেদে ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।

এ ছাড়া বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ এবং সব স্তরের কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা যাতায়াত ভাতা চালুর দাবি জানানো হয়। বর্তমানে কেবল সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরতরা এই সুবিধা পান, কিন্তু গ্রামীণ ও মফস্বল পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষকরা বঞ্চিত বলে জানান তারা।

শিক্ষক নেতারা আরও অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের পে-স্কেলের ৭(খ) অনুচ্ছেদের ভুল ব্যাখ্যার কারণে তারা উচ্চতর গ্রেড সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই নতুন পে-স্কেলে তিনটি টাইম স্কেল পুনরায় চালুর দাবি জানান।

টিফিন ভাতার প্রসঙ্গ উঠলে শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে তাদের দৈনিক টিফিন ভাতা মাত্র ৬ টাকা ৬৬ পয়সা; যা দিয়ে এক কাপ চা পর্যন্ত কেনা সম্ভব নয়। এ তথ্য শুনে কমিশনের সদস্যরা বিস্ময় প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া শতভাগ পেনশন, শতভাগ আনুতোষিক অর্থ, প্রতি দুই বছর অন্তর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, নববর্ষ ভাতা ৫০ শতাংশ এবং সব শিক্ষকদের জন্য রেশন সুবিধা চালুর দাবি তোলেন শিক্ষক নেতারা।

পে-কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, আমরা প্রথমেই শিক্ষকদের মতামত নিচ্ছি, কারণ তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষকরা খুব বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, পে-কমিশনের আমন্ত্রণে আমরা শিক্ষকদের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। বর্তমান বাজারদর ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় পরিবারে ছয় সদস্যের জীবনযাত্রার ব্যয় অনুযায়ী বেতনকাঠামো নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছি।

তবে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন নিয়ে কমিশনের ‘সীমিত সম্ভাবনার’ মন্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এমন হলে কঠোর আন্দোলন ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *